Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
মরমী সাধক বাউল সম্রাট জালাল উদ্দিন খাঁ এর মাজার
Location
০২ নং আশুজিয়া ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডে সিংহেরগাঁও গ্রামে মাজারের অবস্থান।
Transportation
উপজেলা সদর থেকে সি.এন.জি/বাস যোগে সিংহেরগাঁও ক্লাব ঘর মোড় এর ২০০ গজ পূর্ব দিকে।
Details

মরমী সাধক বাউল সম্রাট জালাল উদ্দিন খাঁ সিংহেরগাওঁ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি বহু মরমী, আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব গানের স্রষ্টা। প্রতিবছর উক্ত মৃত্যু বার্ষিকিতে সরকারী ব্যবস্থাপনায় জালাল মেলা অনুস্টিত হয়।

 

 

   মরমী বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বাউল সাধকদের মধ্যে জালাল উদ্দিন খাঁ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে ভিন্ন মাত্রার সাধক। বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ ১৮৯৪ খ্রী: ২৫ শে এপ্রিল কেন্দুয়া উপজেলার আসাদহাটি গ্রামে জন্মগ্রহন করেনে। তাঁর পিতার নাম সদরুদ্দিন খাঁ । জালাল খাঁর ৭ম পুর্ব পুরুষ শচীন শর্মা সাবেক কেন্দুয়া ও বই নেত্রকোনা মদনপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নের মনাং গ্র্রামের এক ব্রাক্ষন ছিলেন। কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধির কবল থেকে আরোগ্য লাভ করে ধর্মান্তরিত হয়ে সুলতান খাঁ ধারন করেন এবং ইউনিয়ন তেতুলিয়া গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরালয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। সেই সুলতান খাঁর বংশধর হচ্ছেন জালাল উদ্দিন খাঁ। কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীর ছাত্র থাকাকালে তার মায়ের ফুফাত ভাই ইউনিয়ন সিংহেরগাঁও নিবাসী হাসমত তালুকদারের একমাত্র কন্যাকে তিনি বিয়ে করেন। ১৯৩০ সালে একমাত্র পুত্র ও একমাত্র কন্যাকে রেখে স্ত্রী মৃত্যুবরন করেন। প্রিয়তমা স্ত্রীর বিয়োগ ব্যাথাই জালাল উদ্দিন খাকেঁ সংসারের প্রতি বৈরাগ্য ভাবের দিকে নিয়ে যায়। মুলত তখন থেকেই তাঁর সংগীত সাধনা শুরু।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নবীন চন্দ্র সেন হেমন্দ্রে ও বংঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলীই বালক জালালের জীবনে ছড়িয়ে দিয়ে ছিল সত্য ও সুন্দরের মহাপ্লাবন। সু প্রসিদ্ধ পল্লী গায়ক আব্বাসউদ্দিন তাকে পীরের মত ভক্তি করতেন।পরিনত বয়সে জালাল খাকেঁ যিনি কৈশোর ও যৌবনে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি হচ্ছেন জালাল খাঁর স্নেহ সান্নিধ্য পাওয়া অধ্যাপক যতীন সরকার।সহজ ও সাবলীল ভাষায় সাধনা রসের সংমিশ্রনে নিয়মের অন্তরালে লুকিয়ে রখা জটিল ও কঠিন তত্ত্বলোকে তিনি সঙ্গীতে তুলে এনে এ দেশের বাউল সঙ্গীতকে করেছেন আধুনিক ও সমৃদ্ধসালী।তাঁর রচিত তথা শব্দ বিন্যাস ,উপমা-অলংকারের নৈপুন্য নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাউল সাধনা, গান রচনা ও পরিবেশনের দ্বারা সারা ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।তিনি চিশতিয়া তরিকায় মুরিদ হয়ে তাঁর গানে আধ্যাত্ব প্রেরনার এক বিরাট উৎস খুলে দেন।জালাল উদ্দিন খাঁ রচিত প্রায় পাঁচ শতাধিক গান নিয়ে যতীন সরকারের সম্পাদনায় ‘জালাল গীতিকা’ পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া ‘বিশ্বরহস্য’ নামে একটি সিগৃঢ় তথ্য সমৃদ্ধ পু্স্তক তিনি প্রকাশ করেন। বিশ্বরহস্য প্রবন্ধ সংকলনে জালালের শক্তিশালী লেখনী ও প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর রচিত গানগুলোরকে বাউল ধারার মারফতি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী ব্যতীত আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, সংসারতত্ত্ব, গুরুতত্ত্ব, পেমতত্ত্ব, বিরহতত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব ইত্যাদি শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছে। ২০০০ সালে প্রকাশিত প্রথম আলোর মিলেনিয়াম স্মারক সংখ্যায় বিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূণ©বাংঙ্গালিদের মধ্যে জালালউদ্দিন খাঁর অন্যতম বলা হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে :

“আমারে কেউ চিনতে গেলে সোজা রাস্তা হয় বাঁকা

বয়সে খোদ খোদার বড়, নামটি কিন্ত নিচে লেখা”

“মানুষ থুইয়া খোদা জজ এই যন্ত্রণা কে

দিয়েছে। মানুষ ভজ

কুরআন খোঁজ, পাতায় পাতায় সাক্ষী

আছে”।

দয়াল প্রেমিকদের অন্তরে দখিনা হাওয়ার

মতো ভেসে আসে জালালের অন্তরের

আর্তনাদ-

“ভালবাসি বলে বন্ধু আমায় কাদাঁলে

থাকতে যদি না দাও দেখা, চাই না

মরিলে”।

এই মহান মরমী সঙ্গীত সাধক বহু শিষ্য, সাগরেদ’ গুণমুগ্ধ, ভক্ত রেখে ৭০ বছর বয়সে ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই বাংলা ১৬ শ্রাবণ ১৩৭৯ রোজ সোমবার দু‌‌‌‌'পুএ, দু’কন্যা এবং দ্বিতীয়া স্ত্রীকে রেখে তিনি দেহত্যাগ করেন। সিংহের গাঁওয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় তাঁর মাজার অবস্থিত। যে জ্ঞান সূর্য হিরন্ময় দীপ্তি ছড়িয়ে অস্তাচলে ডুবে গেলো সেই অসমান্য প্রতিভাধর মরমী বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁর নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণযোগ্য।